মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১০ পূর্বাহ্ন
মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে ইতিকাফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদত। রমজান মাসের শেষ ১০ দিন কিংবা গোটা রমজান মাস দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীর জন্য নিজ ঘরে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে ইবাদত করাকে ইতিকাফ বলে। এই ইবাদতটি রমজান মাসের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। মদিনায় অবস্থানকালে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন। ইসলামের দাওয়াত, সাহাবাদের শিক্ষা প্রদান ও জেহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। চলতি রমজানে ইতিকাফকারীরা আজ সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং রমজানের চাঁদ দেখার পর তারা মসজিদ থেকে বের হবেন।
ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সব বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয় আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। ইতিকাফ ইমান বৃদ্ধির এক মুখ্য সুযোগ। সবার উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইমানি চেতনাকে শাণিত করে উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছার চেষ্টা করা। কোরআনে কারিমে বিভিন্নভাবে ইতিকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ -সুরা বাকারা : ১২৫
অসংখ্য হাদিসে ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন।’ -সহিহ বোখারি : ১৮৬৮
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। অতঃপর অহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হলো যে- তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ পছন্দ করে, সে যেন ইতিকাফে বসে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯৯৪
ইতিকাফের নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকে, এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত। ইতিকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, এ রাত অনির্দিষ্ট; তা রমজানের যেকোনো রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহতায়ালা তা বান্দাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাসজুড়ে তা তালাশ করে। তা ছাড়া ইতিকাফের ফলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং আল্লাহর জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে। কেননা ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে ইতিকাফ অবস্থায়। ইতিকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
ইতিকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে মশগুল করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়।
মসজিদে ইতিকাফের কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে ইতিকাফকারীর আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়, এমনকি ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়। কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সবকিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়। ইতিকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ঐকান্তিকভাবে তওবার সুযোগ লাভ হয়। তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়। সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়। সুতরাং যাদের সময় ও সুযোগ আছে, তাদের উচিত ইতিকাফের আমলে মশগুল হওয়া।
লেখক : দেশ রূপান্তর-এর সহ-সম্পাদক